গল্পের নাম :তোর ছোঁয়া

লেখক : ফারহানা আক্তার রুপকথা 

পর্ব : ১



#তোর_ছোঁয়া 

                (১)

ফারহানা আক্তার রুপকথা 


হঠাৎ হাতে খামচি লাগায়  চিৎকার করে ওঠে মহুয়া। আহহহ,  'কে রে কোন বদমাইশ এমন করলি সামনে  আয়  নয়তো আমার  চেয়ে  খারাপ  কেউ হবে না  বলে দিলাম'। 


আজ  ভার্সিটি তে বসন্ত বরণ উপলক্ষে শাড়ি পড়ে সেজেগুজে এসেছে সে আর রাহি।


-'কিরে কি হল এভাবে বকছিস কাকে'? প্রশ্ন করলো রাহি,মহুয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। 


-'কিছু না মনে হয় আমি একটু বেখেয়ালে ছিলাম'। (কে এমন করলো আমাদের সাথে সাথে তো অনেক স্টুডেন্ট ই ঢুকলো মনে মনে নিজেকেই বলছে মহুয়া)


-'আচ্ছা চল, ভিতরে দেখ সবাই  কত সুন্দর করে সেজে আসছে' বলল রাহি।


-'কেন রে আমরা কি পেত্নীর মত আসছি নাকি'!


-'মহুয়া তুই তো পেত্নী ই সেটা কি ভুলে গেছিস'?কথাটা বলেই হাসতে লাগল রাহি।


-'কি আমি পেত্নী নাকি তুই পেত্নী তোর চৌদ্দ গুষ্টি শুদ্ধো সব পেত্নী' নাক,মুখ ফুলিয়ে কথাটা বলল মহুয়া। তারপর তারা সবার সাথে বসে আড্ডা হই হুল্লোড়ে মেতে ওঠলো।ঘন্টা খানেক পরই মহুয়ার ফোনে কল আসে বাড়ি থেকে। 


-হ্যালো, মা কল দিলে কেন আমি তো বলেই আসছি আজকে দেরি হবে।

-ফোনের ওপাশ থেকে মহুয়ার মা বলতে লাগলেন,, মনে আছে আমার তুই দেরি করে আসবি কিন্তু  কল দিছি এইটা জিজ্ঞেস করতে কাল যে তোর আরোয়ার বিয়ের জন্য  গ্রামে যাবি তো কাপড় গুলা ও তো গুছিয়ে রাখিস নি।


-'মা আমার তো একদমই মনে ছিলো না ।তুমি তো আমার সোনা মা একটু নিয়ে নাও না আমার কাপড় গুলা'। 


-হ্যা,এখন আমি সোনা মা,চাঁদের কণা মা আর ও কত কিছু । হুহ, আমি গুছিয়ে নিয়েছি কল দিসি এটা বলার জন্য  যে তোর জন্য  কোন শাড়ি টা নিবো হলুদে তো সবাই শাড়ি পড়বে।


-'না আমি পরবো না শাড়ি আজকে পড়েই আমি শেষ'

-'আচ্ছা  তাহলে নিলাম না কোন শাড়ি। বাই, বলেই মহুয়ার মা কলটা কেটে দিল'।


দুপুরের পর মহুয়া আর রাহি বাড়ি ফিরতে রিকশার ওয়েট করতে থাকে তারি মাঝে হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা বাইক এসে থামে তাদের সামনে।ঘটনার আকস্মিকতায় রাহি,মহুয়া দুজনেই চমকে ওঠে।


-বাইক থেকে নেমে হ্যালমেট খুলতেই দুজনের চোখ ছানাবড়া কারন তাদের সামনে দাড়ানো ছেলেটা আর কেউ না তাদের ভার্সিটির সিনিয়র ভাই সৌরভ। যাকে ভার্সিটিতে সিনিয়র, জুনিয়র সবাই চেনে।বলতে গেলে মারামারি, ঝগড়া আর পড়া ফাঁকিবাজির জন্য  যথেষ্ট ফেমাস সে। তবে দেখতে ও সুদর্শন। মেয়েদের তো চোখের মনি।


-হাই রাহি,কেমন আছো তোমার বান্ধবী কেমন আছে। (সৌরভ) 


-জ্বি ভাইয়া ভালো, আপনি কেমন আছেন


-আমি তো ভালোই আছি তবে আরেকটু ভালো থাকার চেষ্টায় এখানে আসলাম। আড়চোখে মহুয়ার দিকে তাকিয়েই বলল কথাটা।


-রাহি, মহুয়া এবার যথেষ্ট অবাকই হলো আর ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো 'ব্যাটা বেশি  ভালো থাকতে আমাদের রাস্তা আটকালো কেন'!


-'উফ্ তুই চুপ কর তো আগে দেখি কি বলে'।(রাহি)


-এহম,এহম গলা খাঁকড়ি দিয়ে এবার সৌরভ বলল,  'কি ম্যাডাম আপনাদের ফিসফাস  শেষ হলে আমি কিছু বলবো'?

-হ্যা আসছেন বলতে তো বলে ফেলুন আর আমাদের উদ্ধার করুন(দাঁতে দাত চেপে কথাটা বলল মহুয়া)


-'তোমার  ভার্সিটির প্রথম দিনে যখন তুমি একটা গাঢ় সবুজ রঙের লং টপস  ব্ল্যাক জিন্স আর গলায় স্কার্ফ পেঁচানো কাধে স্কুলের বাচ্চাদের মত ব্যাগ নিয়ে চুল গুলোকে হাতে পনিটেল করতে করতে যখন আসছিলে প্রথম দেখায় আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম তোমার  মাঝে মহুয়া।আমি জানি তুমি বা তোমাদের আমার সম্পর্কে ধারণা খুবই খারাপ, আমাকে সবাই বাজে ছেলে হিসেবেই জানে কারণ আমি ভার্সিটিতে প্রত্যেকটা টিচার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা ছেলের সাথেই মোটামুটি ভেজাল করেছি(মাথাটা নিচু করে বলতে লাগলো)কিন্তু বিশ্বাস করো আজ অব্দি কোন মেয়ের দিকে বাজে নজরে তাকাই নি, তুমি ছাড়া।


-কিহ্!(মহুয়া,রাহি দুজনেই এক সাথে চিৎকার করে) 


-'না মানে তোমার দিকে ও বাজে নজরে তাকাই নি শুধু ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়েছি'।(সৌরভ)


-'আচ্ছা, তা আমরা এখন কি করতে পারি আপনার জন্য ভাইয়ায়ায়া'(মহুয়া)


-'তোমরা না তুমি'বলেই সৌরভ পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট আর একটা গোলাপ বের করে মহুয়ার সামনে ধরে।গোলাপটা পকেটে থাকার কারণে একেবারেই দুমরে মুচড়ে গেছে। মহুয়া একবার সৌরভ তো একবার গোলাপ টার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো 'ব্যাটা ফাজিল মেয়েকে প্রপোজ করতে আসছে নাকি ভিক্ষা চাইতে আসছে।বাইক তো চালায় হেব্বি একখান আর গিফট দেখ একটা গোলাপ চারটা পাঁচটা চকলেট শালা তোর থেকে তো বালো আমাদের গলির মিজান ও ছিলো অন্তত আমার জন্য ২০০ টা গোলাপ, চকলেট বক্স আর আংটি ও নিয়ে আসছিলো ব্যাটার পেট মোটা না হলে আমি নির্ঘাত ওকে বিয়ে করে নিতাম'।


-হঠাৎ সৌরভের চুটকি বাজানোতে মহুয়ার বিড়বিড় করা বন্ধ হয় আর সামনে তাকাতেই বিষম খায়। 


,


সামনেই  দুইটা ছেলে একটার মাথায় ঝুড়িতে গোলাপ আর বেলীফুল ভর্তি, আর অন্য ছেলের ঝুড়ি ভর্তি চকলেট সাজানো ফুল দিয়ে মোড়িয়ে।

,

,

,


-'আমি জানি মহুয়া তোমার বেলী ফুল অনেক পছন্দ আর গোলাপ আমার পছন্দ তাই দুইটাই আনছি। আমি জানি না একটা মেয়েকে কি করে ইমপ্রেস করতে হয় আর কিভাবে কারো মন পাওয়া যায় তাই এই সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করছি। তোমার জবাব কি হবে জানি না আর কখন পাবো তা ও জানি না কিন্তু আমি অপেক্ষা করবো তুমি সময় নাও শুধু জবাব হ্যা হলেই হবে'। বলতে বলতেই মহুয়ার ফোন বেজে ওঠে। 


-হ্যা,মা বল আবার কল করলে কেন আমি আসছি তো বললাম না।(তুমি আছো বাড়ি ফিরা নিয়ে আর এখানে আমি আছি পাগলের পাল্লায় পড়ে, মনে মনে বলতে লাগলো)


-এক ঘন্টা ধরে আসতেছিস এখন ও আসছিস তুই। 

-বাই, মা।

,

,

,


-রাহি এত্তো গুলা চকলেট আর এত্তো গুলা ফুল দেখে তো আমার মাথা নষ্ট কি করবো রে কিছু নিয়ে যাই বলবো জবাব পরে দিব(ফিসফিসিয়ে) 

,

,

,


-মহুয়া তুই কি পাগল হইছিস প্রপোজ একসেপ্ট করলে নে না করলে হাত ও লাগাবি না তবে সৌরভ ভাইয়া আমাকে কেন প্রপোজ করলো না আমি তো তার ওপর ক্রাশ ছিলাম(মনটা খারাপ করে)

,

,

,


-আচ্ছা ভাইয়া,আমাদের এখন বাসায় ফিরতে হবে দেখলেনই তো আম্মু কল দিছে আর আপনাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছি না তাই আমি কিছু চকলেট আর কিছু ফুল নিয়ে যাই আর জবাবটা এসে পরে জানাচ্ছি একটু ভেবে নেই কেমন?

,

,

,

-মহুয়া... চুপ ফাজিল মেয়ে কি শুরু করলি বাচ্চাদের মত (ধমকে কথাটা বলল রাহি)

,

,


-এই তোরা মহুয়া মেডামের বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসবি এ সব কিছু আর রাহি বকছো কেন তুমি ও খেয়ো চকলেট এখান থেকে অন্তত একটু মিষ্টি স্বরে কথা তো বলতে পারবে।(মুচকি হেসে)

,

,

,

তারপর সত্যিই মহুয়া সাথে করে চকলেট আর ফুলগুলো নিয়ে গেল বাড়ি পর্যন্ত আর রাহি তো সৌরভের কথা গুলো হজম না করতে পেরে মুখ ফুলিয়ে চলে গেছে নিজের বাড়ি।

,

,

,


-কলিংবেল বাজতেই রহিমা খালা(কাজের বুয়া) দরজা খুলে দিল।


-রহিমা খালা মা কোথায় গো(মহুয়া)


-আফা তো ভাইজানের রুমে কাপড় ব্যাগ করতাছে বিয়াতে যাইবার লাগি।


-খালা ব্যাগ করতাছে আবার কি প্যাক করতেসে হবে কথাটা(ভ্রু কুচকে)


- ওই একই হইলো,  আফা আপনে কি অহন খাইবেন খাবার দিমু না কি গোসল করবেন আগে।


-খালা আপনি আবার আফা বলতেছেন আমাকে আম্মুকে ও আফা বলেন কত দিন বলছি না আমাকে মহুয়াই বলবেন, আর আমি শাওয়ার নিতে যাচ্ছি পরে খাবো।বলেই মহুয়া নিজের রুমে চলে গেল।


-মাহির, তুই এতো কাপড় নিচ্ছিস কেন বাবা এক সপ্তাহ থাকবো সারাজীবনের জন্য  যাচ্ছিস নাকি তুই।(বিরক্ত হয়ে কথা গুলো মাহিরা বেগম ছেলেকে বলছেন) এরই মধ্যে মহুয়া শাওয়ার নিয়ে ভাইয়ের রুমে ঢুকে মায়ের এমন মুখ দেখে বলে ওঠলো

-ভাইয়া বুঝেছিস মা কিন্তু তোকে রাগানোর চেষ্টায়  আছে যেন তুই বিয়েতে না যাস ।।


-ওই বজ্জাত মেয়ে কখন আসলি তুই কলেজ থেকে আর আমি কেন চাইবো না আমার ছেলে বিয়েতে যাক।(মাহিরা বেগম)


-কেন আবার সেখানে অনেক মেয়ে থাকবে আর তোমার ছেলে কোন মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলেই তো তোমার আদর কমে যাবে সারাক্ষণ সেই মেয়ের পিছে পরে থাকবে, ঠিক বলছি না রে ভাইয়া(ভাইয়ের দিকে চোখ টিপে) 


-হুম,তুই ঠিকিই বলছিস রে মহুয়া মা এজন্যই আমাকে রাগানোর জন্য আমার কাপড় নিয়ে কথা বলছে। রেগে গেলেই তো আমি আর যাবো না বিয়েতে (আড়চোখে  মায়ের দিকে তাকিয়ে দু ভাই বোন মুখ টিপে হাসতে থাকলো)


-হ্যা আমি তো জালিম মা তোদের তো আর খুশি দেখতে চাই না তাই এমন করি, ঠিক আছে আমি কাউকে কিছু বলবো না নিজেদের কাজ নিজেরা করে নে আমি যাবোনা তোদের সাথে কাল থেকে অফিসেই চলে যাব। বলে মাহিরা বেগম চলে যেতে লাগলেন।


-আরে আরে মা তুমি ও না দুষ্টুমি বোঝ না দিন দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো বলেই মাকে জড়িয়ে ধরল মাহির আর মহুয়া কে বকে দিলো।


   

চলবে




                      দন্যবাদ




[ গল্পটির সব পর্ব ইতিমধ্যেই আমাদের Facebook Page এ upload করা হয়েছে । যারা গল্পটির বাকি পর্ব পড়তে চান তারা আমাদের Facebook Page এ গিয়ে পড়ে আসতে পারেন অথবা ১দিন অপেক্ষা করেন নতুন পর্বের জন্য ]